চেতনা!
স্বাধীনতার প্রথম স্বপ্নদ্রষ্টা কিংবদন্তীর মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী !!!
‘খামোশ’ ধ্বনি, যা ছিল সিংহের গর্জনের মতো। ১৯৭০ সালে তিনি বললেন, ‘ভোট নয়, দেশের স্বাধীনতা চাই। আফ্রো-এশিয়া-ল্যাটিন আমেরিকার মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রথম স্বপ্নদ্রষ্টা।
মহৎ এই কিংবদন্তীর খবর ঠাঁই পায় না অধিকাংশ মিডিয়ায়! প্রিন্ট কিংবা ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় কোথায়ও কোন খবর নজরে আসে না।হাতে গোনা ২/১টি দৈনিক ছাড়া অধিকাংশ মিডিয়াগুলোর ভেতরের পাতার সিঙ্গেল কলামেও জায়গা হয় না এই মহান নেতার বিষয়টি। ধিক্কার জানাই এসব মিডিয়াকে: অর্ধনগ্ন নায়িকা-গায়িকা-নর্তকী-নটিনীদের ঢাউস রঙিন ছবি ছাপানোর জায়গার অভাব হয় না। কিন্তু মহৎ কিংবদন্তীর জন্য সামান্য জায়গা হয় না! যে দেশে গুণীর সম্মান দেয়া হয় না, সে দেশে কখনো গুণী জন্মায় না।
কষ্টটা ঠিক এ জায়গাটিতেই। আমাদের তরুণ প্রজন্মের সামনে নেতিবাচক বিষয়গুলোকে বড় করে না দেখিয়ে এই সব গুণী মানুষকে তুলে ধরা হলে আমরা ইভটিজার না পেয়ে এরকম বিরল গুণী ও আপোষহীন দেশপ্রেমিকদের পেতাম। আজকে কাদের দেখে তরুণ সমাজ বড় হবে? দেশে একজন নজরুল, শেরে বাংলা, শরীয়ত উল্লাহ, তিতুমীর, ভাসানী, ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ, কাজী দীন মুহম্মদ, বঙ্গবন্ধু কিংবা জিয়াউর রহমান কি আছেন?
মওলানার অমোঘ ভাষণ। বৃদ্ধ নেতার কী বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর! ‘১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ১০ লাখ মানুষ মারা যাওয়ার পর মওলানা বলেছিলেন, ‘ওরা আসেনি।’ সেদিন থেকে বাংলার স্বাধীনতা পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার উদ্দেশে তিনি বললেন, ‘ইয়াহিয়া সাহেব! আপনি পূর্ব পাকিস্তানের মানুষকে বাঁচান। হাজার হাজার গৃহহারা মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছে; হেলিকপ্টার পাঠিয়ে তাদের উদ্ধার করুন। খাদ্যসামগ্রী পাঠান।’ বক্তৃতার মাঝে মাঝে উচ্চকণ্ঠে উচ্চারিত হচ্ছিল তার ‘খামোশ’ ধ্বনি, যা ছিল সিংহের গর্জনের মতো। প্রতিদিনকার পত্রিকায় তখন গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশিত হতো তার খবর ও ছবি। ১৯৭০ সালে তিনি বললেন, ‘ভোট নয়, দেশের স্বাধীনতা চাই।’
ব্যক্তিজীবনে নির্লোভ ও ক্ষমতালিপ্সুহীন মওলানা ছিলেন দীর্ঘ জীবনের অধিকারী। ভাসানী ছিলেন নিপীড়িত মানুষের অধিকার আদায়ে সোচ্চার। মওলানা ভাসানী ১৮৮০ সালে সিরাজগঞ্জ সদরের ধানগড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯১৯ সালে খেলাফত আন্দোলন এবং ১৯২১ সালে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে তিনি সর্বদলীয় ভাষাসংগ্রাম পরিষদের সভাপতি ছিলেন। তার নেতৃত্বে টাঙ্গাইলে ১৯৫৭ সালে কাগমারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, যা জাতিকে পরে স্বাধীনতার দিকনির্দেশনা দেয়। ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে তিনি সরাসরি অংশ নেন।’৭৬-এর ঐতিহাসিক ফারাক্কা লংমার্চে নেতৃত্ব দেন মওলানা ভাসানী। তিনি আওয়ামী মুসলীম লীগ এবং ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।
চিরসংগ্রামী মওলানা ভাসানী ১৯৭৬ সালের ১৭ নভেম্বর ৯৬ বছর বয়সে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন এবং টাঙ্গাইলের সন্তোষে তাকে দাফন করা হয়।
একে একে সব গুণী মানুষ শুন্য হয়ে গেছে প্রিয় দেশটি। সত্যিই আরেকজন জীবিত ভাসানী নেই। কিভাবে যে এই শুন্যতা পূরণ হবে? তোষামোদকারী গুণীদের ভীরে সত্যিকার গুণী ও নিবেদিতপ্রাণ ভাসানীদের আজ বড়ই অভাব।
ফারাকা লং মার্চের মাধ্যমে মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী জাতীয় দুর্দিনে কিভাবে আগ্রাসী শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে হয়, সে পথ নির্দেশ রেখে গেছেন। বাংলাদেশের প্রাপ্য গঙ্গা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা না পেলে ভারতীয় পন্য বর্জন আন্দোলন শুরু করার নির্দেশ দিয়ে গেছেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবর রহমান ও জেনারেল জিয়া সেদিন মওলানা ভাসানীকে সামনে রেখে আপোসের নয়, একজন দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধার মত লড়াইয়ে সামিল হয়েছিলেন। আর আজ আমরা কি দেখছি, ক্ষমতার লোভে দল বিশেষ, আবার কখনো গোষ্ঠি বিশেষ এ মহান নেতার নির্দেশমত কাজ না করে, আপোসের পথ ধরেছে। এর জন্য অবশ্যই ইতিহাসের কাঠগড়ায় একদিন দাঁড়াতে হবে।